Sunday, February 12, 2017

Hoolock Gibbon

উল্লুক


পর্ব:

কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Primates
পরিবার: Hylobatidae
গণ: Hoolock

পরিচিতি

উল্লুক গিবন জাতের প্রাইমেটদের মধ্যে আকারে দ্বিতীয় বৃহত্তম। বৃহত্তমটি সিয়ামাং। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ হতে ৯০ সেন্টিমিটার, এবং ওজন ৬ হতে ৯ কেজি। পুরুষ উল্লুক আর মেয়ে উল্লুক আকারে প্রায় একই সমান হলেও এদের গাত্রবর্ণের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। পুরুষদের গায়ের রং কালো কিন্তু দর্শনীয় সাদা ভ্রু রয়েছে। অন্যদিকে মেয়ে উল্লুকের সারা গায়ে আছে ধুসর-বাদামী লোম। গলা ও ঘাড়ের কাছে লোমগুলো আরো বেশি কালো। এছাড়া মেয়ে উল্লুকের চোখ ও মুখের চারপাশে গোল হয়ে সাদা লোমে আবৃত থাকে যা অনেকটা মুখোশের মতো দেখায়।
প্রায় ছয়/সাত মাসের গর্ভাবস্থা শেষে শিশু উল্লুকের জন্ম হয়। জন্মের সময় এদের গায়ে ঘোলাটে সাদা লোম থাকে। ছয় মাস পর তা লিঙ্গ অনুসারে কালো বা বাদামি ধূসর রং ধারণ করে। জন্মের ৮ থেকে ৯ বছর পর একটি উল্লুক প্রাপ্তবয়স্ক হয়। উল্লুকের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর।

খাদ্য

উল্লুকরা মূলত বিভিন্ন ধরণের ফল ও ডুমুর খায়। তবে পোকামাকড়, ফুল, কচি পাতা ইত্যাদিও খায়।[১]

জীবনযাপন

উল্লুক সাধারণত সামাজিক হয়ে থাকে এবং পরিবারবদ্ধভাবে বসবাস করে। একটি পরিবারে মা ও বাবা উল্লুকসহ তিন-চারটি বা এর বেশিও উল্লুক থাকতে পারে। এরা উঁচু গাছের মাথায় থাকতে পছন্দ করে। লম্বা হাত ও পায়ের সাহায্যে এরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে যাওয়া-আসা করে। উচ্চস্বরে শব্দ করে এরা নিজেদের এলাকা থেকে অন্য উল্লুকদের সরিয়ে রাখে এবং পরিবারের সদস্যদের অবস্থান নির্ধারণ করে। উল্লুক পরিবারগুলো তাদের এলাকা ও এর সীমানা রক্ষা করে চলে এবং প্রায়ই উল্লুক পরিবারগুলোর মধ্যে সীমানা ও খাদ্যের উৎসের অধিকার নিয়ে বিরোধ ও ঝগড়া হয়।[২]

আবাসভূমি

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব (বৃহত্তর সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্ব (চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম) এলাকার বন ছাড়াও ভারত (উত্তর-পূর্বাংশ), মিয়ানমার (পশ্চিমাংশ) এবং চীনেও (দক্ষিণাংশে) উল্লুক দেখা যায়।[১] তবে অধুনা বাংলাদেশের সিলেটের একমাত্র শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক (Hoolock Gibbon)। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে (প্রেক্ষিত ২০০৬) এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেত। কিন্তু ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোর নিচে এসে ঠেকেছে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্য সংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে (২০০৬) মাত্র ৪৯টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবতী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০-এর মতো। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার রয়েছে (প্রেক্ষিত ২০০৬)। ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়। এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাতাল বা চাপালিশ ফল।[৩]

No comments:

Post a Comment